আজ বিশ্ব মা দিবস। সন্তানের জন্য মায়ের ভালোবাসা আর মমতা মাপার কোনো দাড়িপাল্লা এ বিশ্বে আজো তৈরি হয়নি। মায়ের প্রতি ভালোবাসা জানানোর আজ এক বিশেষ দিন— মায়ের সঙ্গে এ দিনে যদি কিছুটা সময় কাটানো যায় নিঃসন্দেহে মায়ের মন আনন্দে ভরে উঠবে।
মা শব্দটিতে যেন এক গভীর মায়া-মমতা আর ভালোবাসা জড়িয়ে আছে। মা আমাদের সকলের প্রিয় শব্দ।সন্তান ভূমিষ্ট দেওয়া থেকে শুরু করে তাকে বড় করে তোলা পর্যন্ত মা অক্লান্ত পরিশ্রম করে। তাই ইসলামে মায়ের সম্মান অনেক বেশি।
বস্তুতপক্ষে মাকে সম্মান ও ভালোবাসার জন্য নির্দিষ্ট কোন দিনের প্রয়োজন নেই। বরং স্বয়ং ইসলামই মাকে মর্যাদার আসনে বসিয়েছে। নবী করীম (সা:) বলেছেন: নফল নামায পড়া অবস্থায় যদি পিতা তোমাকে ডাকে তাহলে নামায ছাড়া যাবে না, কিন্তু যদি তোমার মা তোমাকে ডাকে তাহলে নামায ছেড়ে দাও।
হযরত মুহাম্মদ (সা:) নিকট এক সাহাবী জানতে চাইলেন আমার উপর কার অধিকার সবচেয়ে বেশি? রাসুলুল্লাহ (সা:) বললেন- তোমার মায়ের। এভাবে তিনবার প্রশ্ন করলে তিনবারই তিনি উচ্চারণ করেন মা। চতুর্থবার রাসুলুল্লাহ (সা:) উচ্চারণ করেন বাবা।
পবিত্র কুরআন শরীফে অনেক আয়াতে পিত-মাতার অধিকার ও সম্মানের কথা বলা হয়েছে।
“আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক কোরো না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করো।” (সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ৩৬)।‘আর আমি (আল্লাহ) মানবজাতিকে নির্দেশ দিয়েছি তারা যেন তাদের পিতা-মাতার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করে; তার মা তাকে অতিকষ্টে গর্ভে ধারণ করেছেন ও অতিকষ্টে প্রসব করেছেন এবং লালন-পালন করেছেন।’ (সুরা-৪৬ আহকাফ, আয়াত: ১৫)।
আমি তো মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। জননী সন্তানকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেন এবং তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে; সুতরাং আমার (আল্লাহর) প্রতি এবং তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। প্রত্যাবর্তন তো আমারই কাছে।’ (সুরা-৩১ লুকমান, আয়াত: ১৪)।‘তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন, তিনি ব্যতীত অন্য কারও ইবাদত না করতে এবং মাতা-পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করতে। তাঁদের একজন অথবা উভয়ে তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাঁদের উফ্ (বিরক্তিও অবজ্ঞামূলক কথা) বলবে না এবং তাঁদের ধমক দেবে না; তাঁদের সঙ্গে সম্মানসূচক কথা বলবে। মমতাবশে তাঁদের প্রতি নম্রতার ডানা প্রসারিত করো এবং বলো, “হে আমার প্রতিপালক! তাঁদের প্রতি দয়া করো, যেভাবে শৈশবে তাঁরা আমাকে প্রতিপালন করেছেন।”’ (সুরা-১৭ ইসরা-বনি ইসরাইল, আয়াত: ২৩-২৪)।
উপরের আয়াতগুলো থেকে স্পষ্টতই বুঝা যাচ্ছে যে ইসলামে মায়ের অধিকার ও সম্মান অনেক বেশি। আল্লাহ্পাক নারীদের জন্য জান্নাত সহজ করে দিয়েছেন।
যদিও ৩৬৫ দিনও মাকে ভালোবাসা জানানোর জন্য পর্যাপ্ত নয় তারপরও একটা দিন যদি শুধু মায়ের জন্য উৎসর্গ করা যায় সেটা তার কাছে দারুন এক উপহার হবে। আল্লাহ তাই মায়ের কাছের সন্তানের পরম শান্তির জায়গা ধরে রেখেছে।
পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর নাম ‘মা’। যেখানে স্নেহ, মমতা ও ভালোবাসার স্থান। সন্তানের বিপদে, কষ্টে, হাজারও যন্ত্রণায় একমাত্র ভরসাস্থল। সন্তানের কাছে মা’র চেয়ে আপন আর কিছু নেই। আজ ‘বিশ্ব মা দিবস’। প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার ‘মা দিবস’ পালন করা হয়।
যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নাড়ির টান, জীবনের প্রথম শিক্ষাগুরু, জীবনের সবচাইতে বড় আশ্রুয়স্থল এবং আদার।মাকে ভালবাসা এবং সম্মান জানানোর জন্য, তার প্রতি ভালোবাসা জাহির করারতে বলে কয়ে একটা দিন আসে না। আমাদের জীবনের প্রতিটা মূহর্তই বা প্রতিটা দিনই মা দিবস।
মায়েদের নিয়ে যে কোনো আলাপই কম মনে হবে। পৃথিবীতে এনে লালন পালন করার এই অসীম ত্যাগের কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই কোনো সন্তানেরই। তবু মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান ও ভালোবাসা জানাতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে উদযাপিত হয় মা দিবস। অনেকে মনে করেন শুধু একদিন নয়, প্রতিদিনই মা দিবস। কিন্তু একটা দিন যদি মায়েদের একটু বিশেষ কদর করা যায়, ভালোবাসি বলা যায় -তাও কম আনন্দের নয়।
তাই তো বড় বড় গূণীজনরা মা কে নিয়ে লিখেছেন অসংখ্য কবিতা গান ও বিশেষ বানী-
মা হল পৃথিবীর একমাত্র ব্যাংক, যেখানে আমরা আমাদের সব দুঃখ, কষ্ট জমা রাখি এবং বিনিময়ে নিই বিনা সুদে অকৃত্রিম ভালবাসা –
যার মা আছে সে কখনই গরিব নয়- আজকের এই দিনে বিশ্বের সকল মা দের প্রতি বিন্ম্র শ্রদ্ধা ভালোবাসা, ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন আপনারা।
পরিশেষে বলব, মা এর প্রতি সম্মান ভালোবাসা শুধু যেন একটি দিনের জন্য না হয় বরং প্রতিটি দিনই যেন হয় মায়ের জন্য।
লেখক:
রাহমান আল আজিজ
সংযুক্ত আরব আমিরাত।