সোমবার | ২রা অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

যাত্রাপথ

মো. আবীর আল নাহিয়ান
প্রকাশিত: সোমবার, ০২ অক্টোবর ২০২৩, ০৪:৩২ পূর্বাহ্ন

কলেজে যাচ্ছিলাম। বাসা থেকে কলেজের দুরত্ব অনেক। এজন্য আগে বের হতে হয়। বাসা থেকে অটোতে করে বাসস্ট্যান্ডে এসে পৌঁছালাম। এমনিতেই আজ দেরি হয়ে গিয়েছে। তার উপর আজ বাস পাচ্ছি না। অনেকক্ষণ পর একটি সিএনজি পেলাম। চালকের মুখটা দেখে পরিচিত মনে হলো। যতটা মনে হচ্ছিলো কোনো ব্যানার/ ফেস্টুনে দেখেছি! আমার হাতে সময় নেই, তাই কোনোকিছু না ভেবেই উঠে পড়লাম। চালক সাহেবের পাশে সামনে বসতে হলো আমাকে।

গাড়ি স্টার্ট দেবার সময়-ই স্ট্যান্ড থেকে একজন চালক সাহেবকে উদ্দেশ্য করে সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় বললেন, ‘মেম্বার নি বা? ভালা আছোনি?’ (মেম্বার সাহেব নাকি? কেমন আছো?)

চালক জবাব দিলেন, ‘আছি ভালাউ’। স্ট্যান্ড থেকে তখন আরেকজন বলে উঠলেন, ‘মেম্বার অইয়া সিএনজি চালাইতরায়, ইতা তো ঠিক নায়’ (মেম্বার হয়ে সিএনজি চালাচ্ছো, এটা তো উচিত নয়)।

আমি চালক সাহেবের মুখে বিরক্তির রেখা দেখতে পেলাম। তিনি বললেন ‘ভাই! আমার পরিবার চালাইতে অইবো তো’ (ভাই, আমার পরিবার চালাতে হবে তো) বলেই তিনি আর কোনো কথা না বলেই গাড়ি চালাতে শুরু করলেন!

চালক সাহেব অপরপাশের যাত্রীকে উদ্দেশ্যে করে বললেন, ‘বুচ্চইন নি ভাই! ইবার ভোটও মাইনষে আমারে মেম্বার বানাইছইন। আমি গরীব মানুষ! আমার পরিবার বড়, অউ ইউনিয়নও যেদিন কাম থাকেনা এদিন সিএনজি চালাই, চাইলে তো ইউনিয়ন ওর ওতা হতাত মাইনষর নাম হারাইয়া দিয়া টেখা নিতে পারি, আমি আমার হরুতারে হারাম খাওয়াইতে চাইনা। এরবাদে আমার আল্লায় তো আমারে দেখরা। আমি সিএনজি ড্রাইভার মানুষ, মাইনষে তারার সেবা করার সুযোগ দিছে, আমিও চেষ্টা করি মাইনষর সেবা করার। বউতে সিএনজি চালাই দেখিয়া আমারে লইয়া হাসে আর কয়, তুমি মেম্বার মানুষ সিএনজি চালাও কেনে? আমি কাম করিয়া খাই ভাই। আর কাম করাত কোনো শরম নাই! (বুঝেছেন ভাই, আমার পরিবার বড়, আমি সিএনজি চালিয়ে পরিবার চালাই, যেদিন ইউনিয়নে কাজ থাকেনা সেদিন সিএনজি চালাই। চাইলে বিভিন্ন তালিকায় মানুষের নাম ঢুকিয়ে আমি ঘুষ খেতে পারি, কিন্তু আমার সন্তানদের হারাম খাওয়াতে চাই না। আমার আল্লাহ তো সব দেখছেন, মানুষ আমাকে তাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছে, আমি তাদের সেবা করার চেষ্টা করি। অনেকে সিএনজি চালাই দেখে বিদ্রুপ করে, আমি কাজ করে খাই ভাই, আর কাজ করে খেতে কোনো লজ্জা নেই।)

চালকের কথাগুলো আমি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম! কত সুন্দর কথাগুলো! কী সুন্দর মনস্তাত্ত্বিক ভাবনা! নিজের আত্নসম্মানের প্রতি কত যত্নশীল তিনি। চালকের এই কথাগুলো আমার হৃদয় ছুঁয়ে গেলো! ভাবলাম, পৃথিবীর সব মানুষের মানসিকতা যদি এমন সুন্দর হতো! ভাবতে ভাবতেই দেখি কলেজের সামনে চলে এসেছি। গাড়ি থেকে নেমে তার ভাড়া মিটিয়ে, এক অন্যরকম ভালোলাগা নিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম ক্যাম্পাসের দিকে!

 

আবির/ কেকে 


আরও পড়ুন