শীত প্রায় শেষ। দিন দিন বাড়ছে তাপমাত্রা। হয়তো আর ক’টা দিন পরেই তারা চলে যাবে নিজ গন্তব্যে। বিদায়ের আগে যেন ভালোবাসা দেখাতে কাছে আসছে। এখানে বিগত ৮ বছর ধরে চলছে তাদের রাজত্ব। কেউ তাদের বিরক্ত করে না বলে আপনমনে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ায়।
দেখলে মনে হবে কোন খামারের এক ঝাক পোষা হাঁস। পুরো দিঘি জুড়েই তাদের বিচরণ। দুপুর বেলা রোদ পোহানোর জন্য কাছাকাছি কচুরিপানার উপর আয়েশে বসে আছে তারা। পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে। উড়াউড়ি করছে। মূলত এরা কারো পোষা হাঁস নয়, এরা হলো পরিযায়ী পাখির দল। পুরো শীতকালজুড়ে এখানেই তাদের বসবাস।
মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার টেংরা ইউনিয়নের দেওয়ান দিঘি তারাপাশা সড়কের পাশে করতল ও রামভদ্রপুর গ্রামের সন্ধিস্থলে অবস্থিত শের খাঁর দিঘি। দিঘি জুড়ে বিগত ৮ বছর ধরে চলছে পরিযায়ী পাখির রাজত্ব। গ্রামে প্রবেশ করলেই শোনা যায় পাখির কিচির মিচির কলরব।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এই গ্রামের শিশু থেকে বুড়ো পর্যন্ত কেহ পরিযায়ির উপর একটা ঢিল ছুড়ে না। সবাই আগলে রাখে। পরিযায়িরা এখানে নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছে। কেউ তাদের বিরক্ত করে না বলেই প্রতি বছর এখানে চলে আসে তারা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে দিঘির পাশে গেলে কানে ভেসে আসে পাখির কলরব আর কিচিরমিচির ডাক। চোখে পড়ে শত শত পরিযায়ির জলকেলির দৃশ্য। অনেকগুলো ভাসছে দিঘির জলে। আর কিছু পাখি একটু উষ্ণতার জন্য রোদ পোহাতে কচুরিপানার উপর আয়েশে আছে। আবার আকাশে ঝাকে ঝাকে উড়ছে,নামছে।
দিঘির পূর্ব দক্ষিণ পাড়ে দাড়িঁয়ে ক্যামেরা তাক করতে কাছে এগিয়ে আসেন রামভদ্রপুর গ্রামের হারুনুর রশিদ। তিনি বলেন, শের খাঁর দিঘির চার দিকেই জন বসতি। গ্রামের সবাই পরিযায়ী পাখির প্রতি খুবই যত্নশীল। কেউ এদের ডিস্টার্ব করে না। আমাদের সচেতনতা আর আন্তরিকতায় এখানে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয়েছে।
করতল গ্রামের তুহিন বলেন, ইদানিং লক্ষ্য করছি পরিযায়ীরা নিরাপদ আশ্রয় স্থল মনে করে দিঘি পাড়ের কাছাকাছি চলে আসে। ৮ বছর আগে পাখি আসা শুরু হয়। প্রথমে অল্প সংখ্যক আসছিল। এখন এর পরিমাণ অনেক বেড়েছে। এখানে তারা দিনের বেলা আয়েশে আরামে অবস্থান করে। আবার কোন কোন সময় রাতে কিছু সংখ্যক খাবারের সন্ধানে বিল ঝিলে চলে যায়।
রামভদ্রপুর গ্রামের সাদিক আহমদ দিপু বলেন, ‘অনেক দিন ধরে আমি এই পাখি গুলো দেখছি। পাখির ডাকাডাকি উড়াউড়ি আমার কাছে ভলো লাগে। পাখি মারা নিষেধ রয়েছে এখানে। প্রথম দিকে কারো কারো পরিযায়ি শিকার করার লোভ জাগছিল। পরে গ্রামের সচেতন মহল নিষেধ করেন। এর পর থেকে সবাই পাখির পাহাড়াদার হয়েছেন’। তিনি আরো বলেন, ‘শের খাঁর দিঘি অনেক পুরোনো দিঘি। ডিস্টার্ব না করায় পাখির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। মাঝে মাঝে কচুরিপানার উপর বাসা বুনে ডিম পেড়ে বাচ্চাও ফুটায়। কাল বৈশাখি শুরু হলে তারা বিদায় নিবে। সরালি,বালি হাঁস ও পানকৌরী এই তিন জাতের পাখি এখানে রয়েছে।
বন্য প্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় কর্মকর্তা মো.রেজাউল করিম বলেন, আমরা শের খাঁর দিঘিতে গিয়েছি। ওখানে ২ হাজারের মত পরিযায়ি পাখি রয়েছে। গ্রামবাসী পাখি সংরক্ষণে খুবই সচেতন রয়েছেন। তারা পাখিদের কোন ডিস্টার্ব করে না। এজন্য পাখি গুলো খুবই কাছে চলে আসে।
রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা আক্তার বলেন, আমরা মাঝে মাঝে গিয়ে এলাকাবাসির সাথে কথা বলে থাকি, যাতে পরিযায়ী পাখির কোন অসুবিধা না হয়। এদের নিরাপত্তা ও সংরক্ষণে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
ডেস্ক/কেকে