বৃহস্পতিবার | ১লা জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

এখনো সমান জনপ্রিয় মান্না

নিজস্ব প্রতিবেদক / ২৮ শেয়ার
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ০১ জুন ২০২৩, ১০:২২ অপরাহ্ন

চলচ্চিত্রে গণমানুষের কথা বলে ‘গণমানুষের নায়ক’ আখ্যা পেয়েছিলেন। জীবন-মৃত্যুর চিরাচরিত ধারায় তিনিও পাড়ি জমিয়েছেন পরপারে। সময়টা ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। মাত্র ৪৪ বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সবাইকে কাঁদিয়ে চলে যান না ফেরার দেশে। এরপর কেটে গেছে এক যুগেরও বেশি সময়। এখনও দর্শক হৃদয়ে বেঁচে আছেন সমান জনপ্রিয়তায়। হ্যাঁ, বলা হচ্ছে চিত্রনায়ক মান্নার কথা।

১৯৬৪ সালের ১৪ এপ্রিল টাঙ্গাইলের কালিহাতীর এলেঙ্গায় জন্মগ্রহণ করেন মান্না। ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি প্রবল ঝোঁক ছিল তার। তাই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করার পর ঢাকা কলেজে পড়াকালীন ১৯৮৪ সালে ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। এ প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই রুপালি জগতে পা রাখেন এ অভিনেতা।

মান্না অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘তওবা’ হলেও তার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার নাম ‘পাগলী’। তবে দর্শক নজরে পড়েন ১৯৯১ সালে মোস্তফা আনোয়ার পরিচালিত ‘কাসেম মালার প্রেম’ সিনেমাতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। এরপরই ধীরে ধীরে চলচ্চিত্রে একটি শক্ত অবস্থান গড়ে তোলেন তিনি। কাজী হায়াত পরিচালিত ‘দাঙ্গা’ ও ‘ত্রাস’ সিনেমাতে দুর্দান্ত অভিনয় করে মান্না হয়ে ওঠেন পরিচালক-প্রযোজকদের ভরসার নাম।

মোস্তফা আনোয়ার পরিচালিত ‘অন্ধ প্রেম’, মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত ‘প্রেম দিওয়ানা’, ‘ডিস্কো ড্যান্সার’, কাজী হায়াত পরিচালিত ‘দেশদ্রোহী’ ছবিগুলো ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তাকে তুমুল জনপ্রিয় করে তোলে। ১৯৯৯ সালে মান্না ‘কে আমার বাবা’, ‘আম্মাজান’, ‘লাল বাদশা’র মতো সুপার-ডুপারহিট সিনেমা দর্শকদের উপহার দেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সাড়ে তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন জনপ্রিয় এ সুপারস্টার।

মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মান্নাকে স্মরণ করতে তার সহধর্মিণী শেলী মান্না প্রতিবছর দিনটি বিশেষভাবে পালন করেন। এবারও ব্যতিক্রম হচ্ছে না। শেলী মান্না বলেন, মান্না ফাউন্ডেশনের কমিটি থেকে দোয়া ও মিলাদের আয়োজন করা হয়েছে।

শুক্রবার মান্নার নিজ জেলা টাঙ্গাইলের প্রেসক্লাবে মান্না স্মরণে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান শেলী মান্না। এছাড়া টাঙ্গাইলে মান্নার পারিবারিকভাবেও মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। পাশাপাশি ‘মান্না ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম’র উদ্যোগে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে শুক্রবার বিকেলে শোক ও স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়েছে।

অভিনেতা হিসেবে সাফল্য পাওয়ার পর মান্না নিজে প্রযোজক হয়ে কৃতাঞ্জলি কথাচিত্র থেকে একাধিক সুপারহিট ছবি প্রযোজনা করেছিলেন। সিনেমাগুলো হচ্ছে ‘লুটতরাজ’, ‘লাল বাদশা’, ‘আমি জেল থেকে বলছি’, ‘স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ’, ‘দুই বধূ এক স্বামী’, ‘মনের সাথে যুদ্ধ’, ‘মান্না ভাই’ ও ‘পিতা মাতার আমানত’।

অভিনেতা হিসেবে একবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, তিনবার মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার, পাঁচবার বাচসাস পুরস্কারসহ বিভিন্ন সম্মাননা পেয়েছেন মান্না।

২০১৭ সালে নায়ক মান্নার স্মরণে তার এক অন্ধ ভক্তের কাহিনি নিয়ে নির্মাতা মালেক আফসারী ‘অন্তর জ্বালা’ নামক একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। বিএফডিসিতে ‘মান্না ডিজিটাল কমপ্লেক্স’ নামে একটি ভবনের নামকরণ করা হয়। এছাড়াও তার স্মৃতি স্মরণে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন নিয়মিত মান্না উৎসব আয়োজন করে থাকে।

জীবনযাত্রা শেষে মৃত্যুর পর জন্মভূমি টাঙ্গাইলের কালিহাতীর এলেঙ্গায় চিরনিদ্রায় শায়িত হন ক্ষণজন্মা নায়ক মান্না।


আরও পড়ুন